পরেরদিন অফিস শেষ করে দ্রুত তড়িঘড়ি বাস কাউন্টারে চলে এলাম। যদি তার দেখা পাওয়া যায়। দুই ঘন্টা অপেক্ষা করলাম সেই রোদের মধ্যে, কিন্তু তার দ্যাখা নেই। মনে মনে নিজেকে বকছি, কেন গতকাল অফিস ছুটির টাইমটা জেনে রাখলাম না। শেষে ত্যক্ত বিরক্ত হয়ে বাসায় ফিরলাম।
বাসায় ফিরে হাজার বার শপথ করার পরও পরদিন আবার আগে আগে বাস কাউন্টারে চলে এলাম। আজকে ভাগ্য সুপ্রসন্ন। দেখি সে আসছে। আমি ডাকব ডাকব করতেই সে-ই আমাকে দেখে ফেলল।
- কি খবর, ভালো আছেন?
- হ্যা, আপনি ভালো?
- হুম, কি বাসে উঠবেন?
- হ্যা আপনার অফিস শেষ?
- হুম,
-প্রতিদিন এই টাইমেই ছুটি হয়?
-হ্যা,
-তাহলে কালকে কোথায় ছিলেন?
-কেন? কালকেও আপনি আমার জন্য অপেক্ষা করেছিলেন নাকি?
আমি অপ্রস্তুত হয়ে গেলাম। এমন সময় বাস এসে গেল।
-টিকিট করেছেন?
আমি মাথা নাড়ালাম।
-আরো বাস চলে আসছে তো?
আমি দৌড়ে কাউন্টারে গিয়ে দুটো টিকিট কাটলাম। ঘুরে দেখি সেও আমার পেছনে। বললাম, টিকিট আপনার টাও কাটছি।
-সেকী, কেন?
-আসেনতো, আরেকদিন আপনি আমারটা কেটে দিয়েন।
সেদিনও গল্পে গল্পে সময় পার হয়ে গেল। আগের দিন নাকি একটা বাজে আগে আগে অফিস থেকে ছুটি নিতে হয়েছিল। তাই আগেই চলে গিয়াছিল। পরের দিন বেরুতে লেট হয়ে গেল। কিন্তু দেখি সে-ই আমার জন্য অপেক্ষা করছে। দ্যাখা হতেই হাতের দুটো টিকিট দেখিয়ে বলল,
- ‘সেই অপেক্ষা করে আছি,দুটো বাস চলে গেছে।’ আমি কাধ ঝাকালাম।
এরপর থেকে ব্যাপারটা রুটিন হয়ে গেল। যে আগে কাউন্টারে আগে সে টিকিট কেটে অপেক্ষা করে। তারপর একসাথে বাসায়। বিরুক্তিকর জ্যাম এখন আমার সবচে প্রিয় জিনিস। প্রদিদিন কামনা করি, জ্যামটা যেন আরো লম্বা হয়। আস্তে আস্তে কী যেন কি হয়ে গেল। সারাদিনের সমস্ত আগ্রহ ঘিরে থাকে ওই জ্যামটুকু। বাড়িতে ফিরেও অস্থির লাগতে লাগল। তখনও তার সাথে কথা বলতে মন চাইত। অবাক হয়ে ভাবতাম, কত কী অর্থহীন কথা যে আমরা বলতাম। তারপরও কথা শেষ হতো না। আরো বাকী রইত। কিন্তু এতদিনের পরও কখনো সাহস করে ফোন নাম্বার চাইতে পারিনি। ফলে ছুটির দিনগুলো, আগে যার জন্য আগ্রহে অপেক্ষা করতাম, সেগুলো ক্রমেই অসহ্য হয়ে উঠল। বুঝলাম আমি তাকে ভালবেসে ফেলেছি। কিন্তু তাকে বলার ক্ষমতা ছিলনা, বললে যদি রাগ করে, যদি আমার সাথে আর বাসে না চড়ে। আমার সম্পর্কে তার অনূভুতিটাওতো আমার জানা নেই।
তখন বর্ষাকাল।
ছাতা না নিয়ে বের হওয়ায় হঠাৎ বৃষ্টিতে একদিন খুব ভিজলাম। পরদিন ভয়ানক ঠান্ডা লেগে গেল। চোখ টোখ লাল হয়ে আর কাশতে কাশতে একাকার। টানা সাতদিন হাসপাতালে। এর মধ্যেও শুধু তার কথাই মনে পড়ত।
হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে পরের দিনই অফিসে ছুটলাম। বাসার সবাই নিষেধ করেছিল। কিন্তু আরো অফিস কামাই হবে বলে ম্যানেজ করে এসেছি।
আর অফিসে অসুস্থতার কথা বলে আগেই ছুটি নিয়ে কাউন্টারে চলে আসলাম।
অপেক্ষা সহ্য হচ্ছিলনা। এদিকে আবার বুক টিপ টিপ করছিল।
হঠাৎ দেখি সে আসছে, কেমন চিন্তিত চেহারা। কাছে আসতেই ডাক দিলাম।
ঝাকি দিয়ে সে আমার দিকে তাকাল, তারপরই পুরো মুখোভঙ্গি বদলে গেল। মুহুর্তেই মুখ রাগে লাল হয়ে গেল। আমার দিকে ঝামটা মেরে কাউন্টারের দিকে এগিয়ে গেল।
আমি আবার ডাকলাম। কিন্তু শুনল না। টিকিট কেটে ঘুরে তাকাতেই দেখি চোখে পানি। সামনে দাড়াতেই চেচিয়ে উঠল।
- ‘সরেন সরেন সামনে থেকে’
আমি অনড়।
- কি সরেন না কেন?”
“আমিও যাব আপনার সাথে”
“আমার কারো সাথে যাওয়া লাগবে না। আমি একাই যেতে পারি।”
আমি কিছু না বলে মাথা নিচু করে থাকি।
অস্ফুটে বলি, “টিকিট কাটছি তো”
- ‘এতই যখন দরদ, কই ছিলেন গত সাতদিন? হ্যাঁ? গত সাতটা দিন দুই ঘন্টা আমি কাউন্টারে অপেক্ষা করতাম। আমি যে আপনার জন্য অপেক্ষা করব, আপনি তা জানতেন, জানতেন না?’
আমি মাথা নিচু করে বলি, হুম।”
- ‘তাহলে? আমার সাথে যেতে না হয় ভাল লাগতেছে না। তো সেটা জানালেই হতো। তাহলে আমার আর টেনশনও করা লাগে না। অপেক্ষাও করা লাগে না।’
- ‘অসুস্থ ছিলাম’
- ‘খুব ভাল, কিন্তু খবর দিতে কি সমস্যা ছিল? অজ্ঞান ছিলেন সাতদিন?’
- ‘কিভাবে দেব, আপনার নাম্বারটা তো আমি জানি না।’
- ‘কেন জানেন না? এতদিনের পরিচয়, আর আমার নাম্বার ওনার কাছে নেই।’
আমি বলতে চাইলাম যে, আমার টাও তো তোমার কাছে নেই। কিন্তু তখনই বাস চলে এল। ও বাস ধরতে ছুটল। আমি পিছনে যেতেই ঘুরে দাড়িয়ে বলল।
- খবরদার আপনি এই বাসে আসবেন না। আপনি উঠলে আমি নেমে যাব।
আমি আর কি করি দাড়িয়ে রইলাম। বাস চলে যেতেই তাকিয়ে দেখি চারপাশের লোকজন আমাকে দেখছে।
বাসায় গিয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম, কালকেই তাকে মনের কথাটা বলবো। যা আছে কপালে। রাত আর কাটে না। পরদিন সকালেই চলে এলাম সাইন্সল্যাব বাস কাউন্টারগুলোর সামনে।
হাতে একটা গোলাপ।
বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হলো না। দেখি সে আসছে।
হঠাৎ সামনে এসে দাড়ালাম। আমাকে দেখে হতচাকিত হয়ে গেল। কাপা গলায় বলল,
- ‘আপনি?’
আমি কিছু না বলে গোলাপটা বাড়িয়ে ধরলাম।
কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলল, ‘এই গোলাপটার মানে কি?’
- ‘আমি জানি না।’
- ‘তাহলে আমাকে দিচ্ছেন কেন?’
- ‘তাও জানি না।’
- ‘না জানলে আমি নেব কেন?’
- ‘আমি দিচ্ছি তাই। আপনি এটা নিলে হয়তো একটা মানে হবে। না নিলে আর হবে না।’
নীচের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে তারপর হাত বাড়িয়ে গোলাপটপ নিল। তারপর বলল,
- ‘ফুলটা আমি নিলাম, এর মানে এখন আমাকে বলেন।’
আমি চুপ করে রইলাম।
- ‘আমার বাস চলে এসেছে, অর্থটা আমাকে বিকেলে জানাবেন।’
বলে চলে গেল।
এখন আমি পড়ে গেলাম বিপদে, কী জবাব দেব এখন, অফিসে সময় কাটল না। চলে এলাম কাউন্টারে। অবশেষে সে এল।
- ‘কি অর্থ বের হয়েছে? বলেন।’
আমি চুপ।
- ‘কি হল?’
- ‘অর্থ বের করতে পারিনি।’
- ‘আপনি একটা ইডিয়েট।’ বলে টিকিট কাটতে গেল, আমি ডাকলাম যে টিকিট কাটা হয়ে গেছে।
শুনে ঘুরে এসে বলল, ‘দেখি আপনার ফোনটা।’
ফোনটা দিলাম। একটা নাম্বার লিখে, ফোনটা হাতে ধরিয়ে দিল।
-‘আমি বললাম কার নাম্বার?’
- ‘জানি না।’
এমন সময় বাস এল। সে বাসে উঠতে চলে গেল। আমিও বাসে উঠলাম। কিন্তু দুজন বসলাম দুই জায়গায়, সারা রাস্তা একটা কথাও হলো না।
বাসায় ফিরে কি করব বুঝতেছিনা। একবার ফোনটা হাতে নেই, আবার রেখে দেই। শেষে ১২ টার দিকে দিলাম কল।
- ‘আস সালামু আলাইকুম। কে?’
- ‘আমি।’
ওপাশে নীরবতা ........অনেকক্ষন পর।
- ‘বলেন, চুপ করে আছেন কেন?’
- ‘কি বলব?’
- ‘আশ্চর্য, ফোন করছেন আপনি। আর কি বলবেন জানেন না?’
আমি কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললাম, ‘ভাল আছ তুমি?’
- ‘এটা কোনো প্রশ্ন হল, এত গাধা কেন তুমি?’
ওর তুমি ডাক কানে মধু বর্ষন করল। বললাম,’সঙ্গদোষে।
- ‘মানে?’
- ‘আগে মাথায় বুদ্ধিশুদ্ধি ছিল, কিন্তু গত কয়েকমাসে একজনের সাথে থাকতে থাকতে সব কমে গেছে।’
- ‘কি? এই কথা, যাও, আর আমার সাথে থাকা লাগবে না।’
আমি হেসে দিলাম, ব্যাপারটা এত সহজে হয়ে যাবে ভাবিনি। পরদিন থেকে আমার রুটিনে চেঞ্জ এল। এখন প্রতিদিন সাইন্সল্যাবে অপেক্ষা করি। একসাথে যাই আর আসি। বিশ্বাস করবেন না ভাই, এই বাস-ই ছিল আমাদের ডেটিং প্লেস, আর ট্রাফিক জ্যাম ছিল সবচে প্রিয় সময়। দুজসেরই অফিস আছে। ফলে এর বাইরে সময় বের করা সম্ভব ছিল না।”
- ‘কেন ছুটির দিনে কি করতেন আপনারা, তখন তো বেড়াতে যেতে পারতেন।’ বহুক্ষণ পর আচমকা বলি আমি।
“- আরে বলবেন না ভাই, তার চেষ্টা কি আর করিনি। কিন্তু উপর ওয়ালা আমাদের ভাগ্যে এই খেলাটাই খেলছিলেন যে আর সম্ভব হয়নি। অনেকবার প্ল্যান করেছি কিন্তু প্রতিবারই কিছু না কিছু হয়েছে। একবার আমার অসুখ হয় তো আরেকবার ওদের বাসায় মেহমান আসে। একবার ও গেলো কিন্তু জ্যামে আটকে আমি গিয়ে পৌছাতেই পারলাম না। একবার মা অসুস্থ হয়ে পড়ল। এরকম হতে লাগ্ল প্রতিবার। বুঝলাম যে জ্যাম বাদে আর আমাদের একসাথে হওয়া সম্ভব না। মেনেও নিয়েছিলাম ব্যাপারটা। ভালই চলছিল সব। আহ! কি সেই দিনগুলো।”
-‘আপনি প্রেম করেছেন?’ আচমকা প্রশ্ন করেন আমাকে।”
আমি মাথা নাড়ি।
“-ধুর তাহলে বুঝবেন না।” বলে তিনি চুপ করে যান।
আমি জিজ্ঞেস করলাম, “তারপর কি? আপনাদের প্রেম কি পরিনতিতে পৌছেছিল, নাকি ট্রাজেডি?
“-ট্রাজেডিয়াস হতে হতেও হয় নি। ওই যে জ্যাম। জ্যামই বাচিয়েছে। ভালই চলছিল আমাদের। কিন্তু এর মধ্যে ভিলেন হয়ে এল যথারীতি নায়িকার বাবা। তিনি মেয়ের বিয়ে দিয়েই ছাড়বেন। এদিকে ও নিয়মিত তাড়া দেয় বাসায় বলে ফেলার জন্য। কিন্তু আমার সাহস হয় না। শেষে ও ঘোষনা করল, আমরা নিজেরাই বিয়ে করব। যুক্তি হিসাবে বলল, প্রেম করার কথা হয়তো আমি বলতে পারছি না। কিন্তু বিয়ে হয়ে গেলেই হয়তো বলতে পারব। আমি আমতা আমতা করে রাজী হলাম।
দুই দিন ডেট ঠিক হল, কিন্তু আমি ভয়ের চোটে যাইনি। কাজী অফিস পর্যন্ত গিয়ে পালিয়ে চলে এসেছি। তিন নাম্বারের বার ও বলল এবার ও ব্যাগ হাতে বেরুবে। আমি সাথে গেলে আমার সাথে আমার বাসায় যাবে। নাহয় সোজা চট্রগ্রামের বাসে উঠবে। ওর বাবা বলেছেন। এবার যদি ও না যায়, তাহলে নিজে নিয়ে যাবেন।
আমি আর কি করি, এবার তো যেতেই হবে। যা আছে কপালে ভেবে বের হলাম। কিন্তু এইবার জ্যাম আমাকে ফেলল বিপদে। পুরো তিনঘন্টা জ্যামে আটকে যখন কাজী অফিসে গেলাম, গিয়ে দেখি ও নেই। এতক্ষণ রাস্তায় এই সেই বলে ফোনে সালাম দিয়েছি। কিন্তু এখন ফোনও ধরছে না। অফিসের লোককে জিজ্ঞাসা করে জানলাম এই মাত্র একটা মেয়ে কতক্ষণ বসে থেকে চলে গেল। আমি দৌড়ে বের হলাম, ফোন দিচ্ছি কিন্তু ধরছে না। বোধহয় ভেবেছে এবারও আমি ফাকি দিয়েছি। আমি দৌড়ে কাছের বাস কাউন্টারের দিকে গেলাম। গিয়ে দেখি ও একটা বাসে উঠছে, পিছন থেকে ডাকলাম কিন্তু শোনেনি। আমি কাছে যাওয়ার আগেই বাস ছেড়ে দিল। সায়েদাবাদের বাস। চট্রগ্রাম চলে যাচ্ছে। মাথার চুল ছিড়তে ইচ্ছা হল। কাউন্টারে এখন আর বাসও নেই। সিএনজি বা আর কিছুও নেই। যাক একটা লোকাল বাস এল। দৌড়ে উঠলাম, কিন্তু কিছুদূর গিয়েই পড়লাম জ্যামে। বহু দিনের প্রিয় জ্যামের চৌদ্দগুষ্টি সহ গালাগাল শুরু করলাম। আর থাকতে পারলাম না। বাস থেকে নেমে দৌড়ে শুরু করলাম। হাটছি, দৌড়াচ্ছি আর ওই বাসটাকে খুজছি। বাসের পিছনে একটা ডলফিন আঁকা। হাটতে হাটতে কখন কাদতে কাদতে শুরু করেছি নিজেও জানি না। কাদছি আর মনে মনে দোয়া করছি। “ইয়া আল্লাহ এই জ্যামটাকে চিরস্থায়ী করে দাও। জীবনে আর কিছু চাই না। শুধু একবার ওর কাছে পৌছাতে দাও। মাঝে মাঝে একটু যখন জ্যাম ছাড়ে, আর আমার হৃদপিন্ডটা বন্ধ হয়ে আসতে চায়। বিশ্বাস করেন আর না করেন, আমি হেটে কমলাপুর পর্যন্ত চলে গেলাম, কিন্তু তার দেখা নাই। ফোন ধরছে না। আমার আর হাটার শক্তি ছিল না। কি করব বুঝতে না পেরে রাস্তার ধারে দাড়িয়ে কাদতে লাগলাম। শব্দ হচ্ছিল না, শুধু চোখ দিয়ে পানি পড়ছিল। এমন সময় সামনে একটা বাস এসে দাড়াল। মনে হল বাসটার জানালায় শান্তা। চোখ ঝাপসা থাকায় বুঝা যাচ্ছিলনা। চোখ মুছে ভাল করে দেখি আসলেই ও। আমি ব্যাকুল হয়ে ডাক দিলাম। ও চোখ তুলে তাকাল, দেখি ওর চোখেও পানি। ও কি একটা বলতে চাইল। কিন্তু বাসটা সাথে সাথে ছেড়ে দিল।
আমি দাড়িয়ে রইলাম। বাসটা ধরার মানসিক বা শারীরিক শক্তি কোনটাই আমার ছিল না।
কিন্তু বাসটা একটু গিয়েই থেমে পড়ল। দেখি শান্তা নামছে। আমি আবার কাদতে শুরু করলাম। এবার আনন্দের কান্না। কাছে এসে একটা ঘুষি দিয়ে বলল, ‘গাধা। আসতে এতক্ষণ লাগল। বাস জ্যামে পড়ে, আর আমি ভাবি তোমার দ্যাখা পাব। আর উনি এখানে দাড়িয়ে কান্নাকাটি করতেছে।’
খুব ইচ্ছে করছিল ওকে জড়িয়ে ধরতে। কিন্তু আমি দাড়িয়েই রইলাম।
- ‘কি? এখানে দাড়িয়েই থাকবে?’
- ‘চলো যাই।’
- ‘কোথায়?’
- ‘কাজী অফিসে। এবার হেটে হেটে যাব।‘
- ‘যাব তার আগে আইসক্রিম কিনে দাও।’
- ‘এই শীতকালে কেউ আইসক্রীম খায়?’
- ‘খাব না, তোমার গায়ে মারব।’
আমি কথা না বাড়িয়ে আইসক্রীম কিনলাম। আর ও সত্যি সত্যি অইসক্রীমটা হাত দিয়ে চটকে আমার গায়ে ছুড়ে দিয়ে, সোজা হাটতে লাগল।
আমি দৌড়ে গিয়ে ওর হাত ধরলাম। ও আমার হাতটা আরো জোরে জড়িয়ে ধরল।”
বলে লোকটা ছখ বন্ধ করে ঝিম মেরে কিছুক্ষণ থেকে বলল, ‘এখন বলেন, জ্যামকে আমি পছন্দ করব কি করব না?’
বলে লোকটা আমার দিকে তাকাল। আমার চেহারার মুগ্ধতা লক্ষ করে সেই রহস্যময় মিটি মিটি হাসতে লাগল।
আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ‘বিয়ে করে বাসায় ম্যানেজ করলেন কিভাবে?’
- ‘সেটাতো আরেক বিরাট কাহিনী। আজকে আর টাইম হবে না। বাস গুলিস্তান চলে আসছে, আমি নামব। আরেকদিন যদি দ্যাখা হয়, তবে বলব।’
বলে লোকটি নেমে গেল।”
লোকটার গল্পের ফাকে কখন এদ্দুর চলে এসেছি খেয়াল করিনি। গল্পে গল্পে সময়টা ভালই গেল। এখন আর জ্যাম এতটা বিরক্ত লাগছে না।
বাস গুলিস্তান থেকে ছেড়ে, আর একটু গিয়ে জ্যামে পড়ল। হঠাৎ পাশে একটা বাস এসে দাড়াল। আমি আগ্রহ নিয়ে জানালা দিয়ে বাইরে তাকালাম। কিন্তু ভাগ্যে শিকে ছিড়ল না। দেখি এক মহিলা বমি করছে।
আমি শিউরে মুখ ফিরিয়ে নিলাম
by- অসীম পিয়াস
No comments:
Post a Comment