Monday, November 11, 2013

বেচে থাকুক ট্রাফিক জ্যাম(১ম পর্ব)


‘জ্যামে পড়লে মানুষ কেন যে বিরক্ত হয়। আমার কিন্ত ভালই লাগে।’
কথা শুনে রাগে পিত্তি জ্বলে গেল আমার। বক্তা আমার পাশের সীটের ভদ্রলোক। এপ্রিলের প্রচন্ড গরমে ট্রাফিক জ্যামে আটকে আছি। বাসে চড়েছি মিরপুর থেকে যাব মতিঝিলে।এখন আছি ফার্মগেটে।এতটুকু আসতেই প্রায় ৪৫ মিনিট পার হয়ে গেছে। এখানে আটকে আছি মনে হচ্ছে ঘন্টা খানেক। আসলে ৫ মিনিট ও হয়নি। গরমে পুরো শরীর ঘেমে গেছে এবং নানান বিশ্রী জায়গায় চুলকাচ্ছে। কিন্ত চুলকাতে পারছিনা। কারণ এই ব্যাটা ভালোই মোটা। নিজেরটা ছাড়াও আমার সীটেরও খানিকটা দখল করে ফেলেছে।এর মধ্যে এই কথা শুনলে কার ভাল লাগে?
মনে মনে বললাম, ‘ ব্যাটা তোর ভাল লাগে, তুই সারা জীবন জ্যামে বসে থাক, আমি থাকতে পারব না,আমার ভাল লাগেনা।’


কিন্তু মুখে কিছুই না বলে আমি তার দিকে শুধু তাকালাম।
-‘জ্যামের মধ্যেও মজা আছে বুঝলেন!’
‘তোর মজা তুই খা’ মনে মনে বলি।
-‘এই জ্যাম নিয়েই আমার লাইফের সবচেয়ে বড় ঘটনা ঘটেছিল। শুনবেন?’
বলে লোকটা হাসি হাসি মুখে আমার দিকে তাকালো। আমি হতাশ ভঙ্গিতে তার দিকে তাকালাম, কোন কথা বললাম না।
-‘আরে শোনেন, ইন্টারেস্টিং কাহিনী।’
লোকটা আমার বিরক্তি সম্পূর্ন উপেক্ষা করে নিজে থেকেই বলতে লাগল-
“চিটাগাং থেকে ঢাকা ফিরতেছি, বুঝলেন। তখন আর সবার মত আমিও জ্যামকে অপছন্দ করি। মীরেরসরাইয়ের কাছে এসেই পড়লাম জ্যামে, বাস আর নড়ে চড়ে না । বসে থাকতে থাকতে পায়ে ঝিঝি লেগে গেছে। বাসওয়ালা মাঝে মাঝে রাস্তা থেকে নামিয়ে পাশের কাচা রাস্তা দিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। এখন তাও বন্ধ। হঠাৎ যেন অনন্ত কাল পরে জ্যাম ছুটলো।কিন্ত মিনিট পাচেক না যেতেই আবার আগের মত অবস্থা। ড্রাইভার আবার বাস রাস্তা থেকে নামিয়ে কাচা রাস্তায় ছোটালো। শুকনো দিন , ভয়ানক ধুলো রাস্তায় । ধুলোর মেঘ পেরোতে পেরোতে বাস হঠাৎ ঘ্যাচাং করে ব্রেক করে থেমে গেল। আর হঠাৎ একটা আইসক্রীমের কাঠি জানালা দিয়ে আমার গায়ে এসে পড়ল। কাঠিতে তখনো আইসক্রীম লেগে আছে। আমার অফ হোয়াইট শার্টে চকলেট বাটিক প্রিন্ট হয়ে গেল। ভয়ানক রেগে জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখি পাশের বাসের জানালায় আরেকটা মেয়ে, যেন কিছুই করিনি, এমন ভাবে তাকিয়ে আছে।
- এই যে ম্যাডাম, এই?
মেয়েটা ভুরু কুচকে তাকালো শুধু একটু।
- চোখে দেখেন না? ভদ্রতা নাই? আইসক্রীমের কাঠি কোথায় ফেলেছেন?
- একটু অবাক হয়ে মেয়েটা বলল, কেন? রাস্তায়?
- রাস্তায়, এইটা রাস্তা? বলে আমার শার্টটা উচু করে ধরলাম। আমি ভাবলাম হয়তো সরি বলবে, কিন্ত মেয়েটা সমান রেগে আমাকে বলল,
- আমার কি দোষ, আমি রাস্তায় ফেলেছিলাম। আপনার বাস এসে পড়বে তা জানতো কে?
আমি নিস্ফল আক্রোশে এক হাতেই আইসক্রীমের কাঠিটা ভেঙ্গে মুচড়ে বাইরে ফেলে দিলাম। মেয়েটার গালে ঠাস করে একটা চড় মারতে পারলে শান্তি হত। শক্ত একটা চড় যাতে চাপার দু-চারটা দাত নড়ে যায়। তাহলে আর আইসক্রীম খাওয়া লাগতো না। চাপায় চেপে ধরে ব্যথা কমানো লাগতো। মেয়েটা কিভাবে শায়েস্তা করব ভাবছি তখনি আবার জ্যাম ছুটে গেল। পাশের গাড়িটা চলে গেল। আমাদের বেকুব ড্রাইভার গাড়ি রাস্তায় আর উঠাতে পারেনি। তাই আমরা সেখানেই আটকে রইলাম। লোকজন গালাগাল শুরু করল। তাতে আর কি হবে? জ্যাম তো আর ছুটছে না। এরপর গাড়ি একটু এগোয় আর থামে। এভাবে করতে করতে জ্যাম একসময় কমল। মোটামুটি বেশ কিছুদুর বাস ভালোই চলল। কিন্ত কুমিল্লার কাছে এসে আবার ঘ্যাচাং। এবং এবার মিসাইলের মত একটা আমড়ার বিচি আমার দিকে ছুটে এলো। তাকিয়ে দেখি পাশের বাসে, আর সেই মেয়েটিই। এবার আমড়া খেয়ে ছুড়ে মেরেছে। ফুরফুরে বাতাসে মেজাজটা একটু ঠান্ডা হয়েছিল। আবার তাতে আগুন ধরে গেল।জানালা দিয়ে গলা বের করে চিৎকার দিলাম।
- ‘এই মেয়ে এই। চোখের মাথা খাইছ নাকি? একবার আইসক্রীমের কাঠি মারলা, এই বার আমড়া। আমি কি ডাষ্টবিন নাকি?’
আমার চিৎকারে বিন্দুমাত্র না ঘাবড়ে মেয়েটা বলল,
-‘ দ্যাখেন এবারও আমার দোষ ছিল না। দোষ আপনার বাসের। যখনই আমার কিছু কিছু ফেলার হয় তখনই আমার পাশে এসে দাড়ায়। আমারতো মনে হচ্ছে আপনিই আমার ফেলে দেয়া জিনিস নিতে আমার পাশে ঘুরছেন।আর কিছু লাগবে? একটু দাড়ান চিপস আছে। খেয়ে প্যাকেটটা দিচ্ছি।’
-আমার সাথে ইয়ার্কি কর? থাপড়ায়ে দাঁত ফেলে দেব।
-আরে, আমি কি করলাম।
আমি সমস্ত রাগ দিয়ে আমড়ার বিচিটাকে আছাড় দিয়ে, শব্দ করে জানালা বন্ধ করে বসে পড়লাম। আমড়া খওয়া! ঘুষি দিয়ে যদি আমড়া খাওয়া দাতগুলো ফেলে দিতে পারতাম। আবারও মেয়েটাকে বাচিয়ে জ্যাম ছেড়ে গেল।
একটু জিরোয় ফের ছুটে যায়, এভাবে করে করে বাস চলতে লাগল। আমার বাসের পাশে কোন বাস আসলেই জানালা টেনে দেই। যথারীতি নিয়ম মেনে বাস কাঁচপুর ব্রীজের এখানে আবার দাড়িয়ে গেল। ডানে তাকিয়ে দেখি সেই বাসটা। মেয়েটা কোক খাচ্ছে নির্ঘাত বোতলটা ছুড়ে মারবে। আমি দ্রুত জানালাটা টেনে দিলাম।
যা ভেবেছিলাম তাই, মেয়েটা কোক খেয়ে বোতলটা ছুড়ে মারতে গেল। কিন্তু হঠাৎ খেয়াল করল যে পাশে বাস। তাই আস্তে বোতলটা ফিরিয়ে নিল। তারপর আমার দিকে চেয়ে একটা ফিচলে মার্কা হাসি দিল।
- ‘আবার আপনি। বোতলটা নেবেন? ছুড়ে মারব না। এমনিই দেব। নিন।’
বলে বোতলটা আমার দিকে বাড়িয়ে ধরল।
আমি আগুন চোখে তাকিয়ে মুখ ফিরিয়ে নিলাম।
মেয়েটা শব্দ করে হেসে উঠল। আর আমি দাঁত কিড়মিড় করতে লাগলাম। এদিকে গরম লাগছে কিন্তু জানালা খুলতে পারছি না।
বাসটা কিছুক্ষণ পর ছেড়ে দিলে হাফ ছেড়ে বাচলাম।
বাকি রাস্তা একটাই প্রার্থনা করলাম, যেন আর মেয়েটার সাথে দ্যাখা না হয়।
আল্লাহ কথা শুনলেন, আর মেয়েটার সাথে দ্যাখা হয় নি।”
এতটুক বলে লোকটা একটু থামল। একটা মন্তব্যের আশায় ভ্রু উচিয়ে আমার দিকে তাকাল। আমি তখনো বিরক্ত কারণ বাস তখনো ছাড়েনি। তাই কিছু না বলে চোখ ফিরিয়ে নিলাম। লোকটা তা না দ্যাখার ভান করে আবার শুরু করল।
“ আরে ভাই, কাহিনীতো শেষ না, কাহিনী মাত্র শুরু---
ঢাকায় আসার সপ্তাখানেক পর কি কাজ এয়ারপোর্ট গেছি। ফিরতে পথে মহাখালীর জ্যামে পড়লাম। ভয়াবহ গরমে জান হাসফাস। বাতাসের আশায় মাথা জানালা দিয়ে বাড়িয়ে আছি। কিন্তু তাতে বাগড়া দিয়ে পাশেই একটা বাস থামল। আমি হতাশ হয়ে মাথা ঘুরিয়ে নিচ্ছি। এমন সময় ডাক শুনলাম-
-‘এই যে, - এই যে’
বাইরে তাকিয়ে দেখি সেদিনকার সেই মেয়েটা। দেখে বিরক্তিটা আরো বাড়ল। অভদ্রতা হবে বলে মাথা ঘুরিয়ে নিলাম না।
- ‘আমাকে চিনেছেন? ওই যে চিটাগাং থেকে আসার পথে আপনাকে কতকিছু দিলাম।’ বলে হেসে দিল মেয়েটা।
এবার আর আমি থাকতে পারলাম না। চোখ ঘুরিয়েই নিলাম।
“হ্যালো.......................................”
আমি অনড়। এমন সময় কন্ট্রাকটর ভাড়া নিতে আসায় ওদিক ব্যস্ত হয়ে গেলাম আর এই ফাকে বাসটা একটু এগিয়ে গেল। কিছুক্ষণ পর আবার বাসটা পাশে এল। এবার অবশ্য মেয়েটা কিছু বলল না। শুধু মিটি মিটি হাসতে লাগল। এভাবে কিছুদুর যেতেই আবার বাস থামে। পাশের বাসটা আসে। আর মেয়েটার দিকে চোখ গেলেই সে হাসে। যাই বলেন ভাই, মেয়েটার হাসি কিন্তু সুন্দর। তাই হয়তো মনে রাগ হলেও বার বার তাকাচ্ছিলাম। কিছুদুর পর দুই বাস দুই দিকে চলে গেল। ব্যাপারটা ভুলেই গেছিলাম। কিন্তু উপর ওয়ালা ব্যাপারটা অন্যভাবে লিখে রেখেছিল। কয়েকদিন পর আবার দ্যাখা হল মেয়েটার সাথে।
কোথায় বলেনতো? লোকটার জিজ্ঞাসু দৃষ্টি-”
- ‘ট্রাফিক জ্যামে?’ বলি আমি।
“- একদম ঠিক। এইবার আর পাশের বাসে না। একই বাসে। নিউমার্কেটের সামনে এবার বাস। এবার অবশ্য আমি জানালার পাশে না। ভিতরের দিকে। হঠাৎ এক বয়স্ক মহিলা ঠেলেঠুলে উঠে পড়ল। হাতে কিছু ব্যাগ। ফলে বাসের স্ট্যান্ড ও ধরতে পারছিল না। আমি সিটটা ছেড়ে তাকে জায়গা দিলাম। উঠে একটু পিছনে সরে দাড়ালাম। দেখি সামনের সিটেই সেই মেয়েটা বসা। আমাকে দেখে বলল......
- আপনিতো আসলে ভালো লোক। কিন্তু এত রাগী কেন?
- আমি ভাল লোক আপনাকে কে বলল?
- এই যে, কি সুন্দর মহিলাটাকে বসতে দিলেন। আপনি না দিলে আমাকে উঠে দাড়াতে হতো।
- এতেই আমি ভালো?
- হুম, কিন্তু মনে হচ্ছে খুব রাগী। আচ্ছা, ওই দিন যা হয়েছে তাতো আমার অনিচ্ছাকৃত ছিল।
তার জন্য এখনো রাগ করে থাকতে হয়? আপনার শার্টের আইসক্রীমের দাগ ওঠেনি?
- না তা না, আসলে আমি যখন রেগে থাকি বা বিরক্ত থাকি, তখনই আপনার সাথে আমার দ্যাখা হয়।
- এখন রেগে আছেন কেন?
- এই যে, ট্রাফিক জ্যাম।
- এটাতো প্রতিদিনকার রুটিন। এতোদিনে তো মানিয়ে যাওয়ার কথা।
- আমার ক্ষেত্রে মানায় নি।
বাস তখন চলা শুরু করেছে।
- এইতো বাস ছাড়ল। এখন নিশ্চয়ই একটু ঠান্ডা হবেন।
আমি কিছু না বলে একটু হাসলাম। এমন সময় মেয়েটার মোবাইলে কল এল।
‘এইতো চলে আসছি কাছে। আনছি আনছি।’ এই টাইপের কি কি কথা বলতে বলতে বাস সাইন্সল্যাব চলে এল। মেয়েটা ফোন কেটে দ্রুত উঠে দাড়িয়ে বলল, ‘আমি এখানে নামব আপনি বসেন। আর এত রাগবেন না। কেমন?’
বলে নেমে গেল।
এরপর থেকে কী যে হল ভাই। জ্যামে পড়লেই মেয়েটাকে আমি খুজি। কিন্তু এবার আর দ্যাখা নাই। প্রায় দুইমাস পর আবার তার দ্যাখা পেলাম। নীলক্ষেতের সামনে। যথারীতি আমি জ্যামে বসা। এমন সময় তাকে দেখলাম। আর একটা মেয়ের সাথে নীলক্ষেত ঢুকছে। আমি বসেছি ভিতরের দিকের সীটে। তারপরও পাশের যাত্রীর উপর দিয়ে গিয়ে জানালা দিয়ে ডাকার চেষ্টা করলাম। কি নামে ডাকব ভেবে না পেয়ে ‘এই’ বলেই চিৎকার দিলাম। কিন্তু শুনল না। আমি কি মনে করে বাস থেকে নেমে গেলাম। ওরা যে গলিতে ঢুকেছে সেদিক দিয়েই ঢুকলাম। বহুত খুজে না পেয়ে মেজাজ খিচড়ে বেরিয়ে এলাম। আবার বাসের টিকিট কেটে প্রায় ঘন্টাখানেক রোদ মাথায় লাইনে দাড়িয়ে থেকে তার পরে আবার বাসে উঠতে পারলাম। কিন্তু এবার আর সিট পেলাম না। সেই ভয়াবহ জ্যামে আর গরমে দাড়িয়ে থেকেই মিরপুর ফিরলাম। নিজেকে আমার আস্ত একটা ছাগল মনে হচ্ছিল। আর মেয়েটার চিন্তা মাথা থেকে বাদ দিলাম। কিন্তু ওই যে বললাম, বিধাতার খেলা। আমি যেই মেয়েটাকে ভুলতে বসেছি, ওমনি আবার তার সাথে দেখা।
যথারিতী ট্রাফিক জ্যামে বাসে বসে আছি। হঠাৎ পেছনে শুনি কন্ট্রাকটরের সাথে এক মেয়ের চেচামেচি।
- ১৮ টাকা মানে, ১৬ টাকার ভাড়া ১৮ টাকা কেন রাখছেন।
- ভাড়া ১৮ ট্যাকাই।
- ১৮ টাকা না? কয় দিন এই রাস্তায় গাড়ি চালান? আমি প্রতিদিন এই রাস্তায় যাই আসি।
কন্ঠটা পরিচিত মনে হতে ঘুরে তাকালাম, দেখি সেই মেয়েটা। মেয়েটাও আমাকে খেয়াল করল। করে আমাকেই নালিশ করল।
- দেখছেন ১৬ টাকার ভাড়া ১৮ টাকা চাইছে। কিছু একটা বলেন।
আমি সাধারনত ভেজালকর যে কোন পরিস্থিতি এড়িয়ে চলি। এধরনের ক্ষেত্রে দুই এক টাকা এমনিই দিয়ে দেই। তাই মিন মিন করে বললাম।
- দুই টাকাই তো। দিয়ে দেন না।
- দুই টাকা মানে। দুই টাকা দুই টাকা করে ভাড়া কত হইছে দেখছেন? ১০ টাকা ছিল ভাড়া, এখন ১৮ টাকা। এই আপনাদের জন্যই ভাড়া বাড়ানোর সাহস পায় এরা। চাইতেই দিয়ে দেন। কিছু বলেন না আর লাফায় লাফায় ভাড়া বাড়ে।
কন্ট্রাকটর ততক্ষনে সরে গেছে। আমিও আত্মপক্ষ সমর্থন করতে যেতেই রাগটা পড়ল আমার উপর।
- ‘শুধু যেখানে সেখানে রাগ করতে পারেন। যারা দোষ করেনা তাদেও উপর ঠিকই রাগ ঝাড়তে পারেন। অথচ যেখানে দরকার সেখানে বিড়ালের মত মিউ করেন।’
আমি আর কিছু না বলে চুপ থাকাই শ্রেয় মনে করলাম।
কিছুক্ষণ পর সাহস সঞ্চয় করে যেই কিছু একটা বলতে যাব অমনি বাস সাইন্সল্যাব চলে এল মেয়েটাও নেমে গেল।
এবারও কিছু জানা হলনা। কিন্তু এবার আমি জানতাম যে মেয়েটার সাথে আবার আমার দেখা হবে এবং এই ট্রাফিক জ্যামেই।”
বলে লোকটা থামল, কারণ কন্ট্রাকটর ভাড়া নিতে এসেছে। দুজনই ভাড়া দিলাম। ভাড়া দিয়ে লোকটার দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালাম। কারণ গল্পটা ভালই লাগছে । লোকটা মিটিমিট হাসল আমার দিকে তাকিয়ে, যেন জানতো যে এমনই হবে। লোকটা গল্পটা যদি বন্ধ করে দেয় এই ভয়ে আমি একটু হাসার চেষ্টা করলাম। যাই হোক লোকটা আমাকে হতাশ করল না। আবার বলা শুরু করল।
“দেখা হল, এবার বেশ দ্রুতই। মতিঝিলে অফিস শেষে বাসে উঠে জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখি টিকিটের লাইনে সে। লাইনটা আস্তে আস্তে বাসে ঢুকছে। ভয়ে ছিলাম, শেষ পর্যন্ত উঠতে পারবে কিনা। শেষ পর্যন্ত পারল। ভীড় ঠেলে আমার কাছে এসেই দাড়াল। আমি ডাক দিলাম।
- এই যে এই............
মেয়েটা তাকাল। কিছু বলল না। কিন্তু আমার দিকে এগিয়ে এল।
কাছে আসতেই আমি সিট ছেড়ে দিতে চাইলাম। কিন্তু মেয়েটা না করল।
- থাক থাক আমি বুড়ি না।
আমি হেসে দিলাম। বললাম,
- এর আগে আমি রাগ করেছিলাম, এইবার আপনি। কাটাকাটি।
মেয়েটাও হাসল। বলল,
- ঠিক আছে, কিন্তু সীট ছাড়তে হবে না। দাড়িয়ে আমার অভ্যাস আছে।
- ভালকথা আপনার নামটা আমি জানি না।
- নাম দিয়ে কি করবেন। হুম?
- কিছু না, আপনার সাথে এতবার দ্যাখা হল, তাই জানতে ইচ্ছা হল।
- হুমম, আমি শান্তা।
- নাম শুনে তো মনে হয় শান্ত একটা মেয়ে, কিন্তু আপনিতো মোটেও শান্ত না।
-সে কথা সবাই বলে। বাদ দেন, আপনার নাম কি?
আমি নাম বললাম। তারপর আর কি বলব ভেবে ভেবে পাচ্ছিলাম না। কিন্তু মেয়েটাই কথা শুরু করল। নানা কথায় জানতে পারলাম। যে থাকে সাইন্সল্যাবে থাকে। মতিঝিলে চাকরি করে। বাড়ি চট্রগ্রাম। চাকরি করাটা অবশ্য ফ্যামিলি পছন্দ করে না। কিন্তু সে মনে করে যে এত পড়াশোনা করেও যদি কিছু না করেও ঘরে বসে থাকি , তাহলে আর পড়াশোনার কি দরকার ছিল। তার অফিসের ঠিকানাটা জেনে নিলাম। আমার অফিসের কাছেই। কথা বলতে বলতে সাইন্সল্যাব চলে এল বাস। এই প্রথম কোন দিন আমার জ্যাম শেষ হয়ে যাওয়ায় খারাপ লাগল।

By- অসীম পিয়াস

No comments:

Post a Comment