প্রথম দৃশ্য ঃ
ছেলেটা হাউমাউ করে কাঁদছে। অথচ কোন শব্দ আসছে না, দু’হাতে যে মুখ চেপে ধরা। শব্দ আসবে কিভাবে? সমস্ত শরীরে ছোপ ছোপ রক্ত। কিছু রক্ত ভেসে যাচ্ছে উষ্ণ কান্নাজলে। ১৬ বছরের চঞ্চল ছেলেটা কান্না থামিয়ে দিচ্ছে আস্তে আস্তে। সেই সাথে বাড়ছে মেঝেতে রক্তের প্রবাহধারা। সামনের মৃদু আলো নিভে যাচ্ছে একটু একটু করে, অনেক। তারপর - - - - তারপর কেবল শরীরজুড়ে শীতল নিথরতা। বাহিরে হঠাৎ মেঘ ডেকে উঠল অপরিচিত গর্জনে।
শেষ দৃশ্য ঃ
এলোমেলো বাতাসে হঠাৎ হঠাৎ চুলগুলো ভেজামুখে লেপ্টে যাচ্ছে। তবু বিরক্তি নেই মেয়েটার। ও কি কিছুই টের পাচ্ছে না? সাদা কামিজের বুকের কাছটা লালচে হয়ে আছে। রক্তের লাল। কার রক্ত? জীবনের শ্রেষ্ঠ মানুষটার নিশ্চুপ নির্বাক মুখের লাল রক্ত, যে রক্তেই রঞ্জিত ওর বুক, ওর আত্মা, ওর জীবন। বাবা ধাক্কাধাক্কি করে না টানলে হয়তো অনন্তকাল ঐ মাথাটা জড়িয়ে রাখত বুকের সাথে।
টপটপ কান্নাফোটাগুলো ভিজিয়ে ফেলছে ওর হাত। যে হাতে প্রতি বিকেলে আর কোন আদরের ছাপ পড়বে না, কখনো না।
হারিয়ে যাওয়া দৃশ্য ঃ
দুপুর থেকে মেঘ ডেকেই যাচ্ছে। ভাবসাব সুবিধার না, হঠাৎ ঝড় শুরু হয়ে যেতে পারে। এখন বাজবে কয়টা, বিকাল হয়তো। আর আকাশের অবস্থাতো পুরাই সন্ধ্যা। জোরে জোরে হাঁটছে আর আকাশের দিকে তাকাচ্ছে জরি। গতকাল জ্বর থেকে উঠেছে, আজ যদি আবার ভেজে তবে মা আর আস্ত রাখবে না। বাবা কি করবে সেটা না হয় বাদই থাক।
এদিক সেদিক চোখ ঘুরানোর মাঝে হঠাৎ দৃষ্টি আটকে রাখল সামনে। জরির ঠোঁটে এখন লাজুক হাসি।
আচ্ছা ঐ পাগলটার কি কোন কাজ নেই? এত দেখে তবুও দেখা শেষ হয় না ওটার?
প্রশ্নটা করতে বড় ইচ্ছে করে, তবু থেমে থাকে। থাক, পরে যদি আবার হাওয়া হয়ে যায়। ছেলেটা বড্ড পাজি, বলা নেই, কওয়া নেই হঠাৎ করে কোথায় যেন ঘাপটি মেরে থাকে অনেকদিন।
জরি আস্তে আস্তে হেঁটে যায়, প্রচন্ড ইচ্ছে হয় ওকে একবার দেখতে। তবু মাথা নিচু করে থাকে, লজ্জা লাগে যে। কিছুদূর এগুতেই ঝমঝম করে নামল বৃষ্টি। অঝোর বৃষ্টিতে ভিজে যাচ্ছে জরি। ও একটু পিছন ফিরে তাকাতেই দেখে পাজিটা দৌড়ে আসছে। জরি জানে, ছেলেটা ওর হাতে ছাতাটা ধরিয়েই দিবে দৌড়। তারপর খুব জ্বরে বিছানা ছেড়ে উঠতে পারবে না। আসবে না এই জায়গাটায়, আর দেখাও হবে না। কিন্তু জরির যে অস্থির লাগে একটিবার ওর মুখটা না দেখলে।
জরির চোয়াল শক্ত হয়ে যায়, না আজ আর ওকে যেতে দেবে না। আজ হবে পাশাপাশি, একদম গভীর নীরব ভালোবাসার অনুরণ। ছেলেটা ওর হাতে ছাতাটা ধরাবার আগেই জরি নরম হাতে ধরে ফেলল ওর হাত। ছেলেটার দৃষ্টি বড় শান্ত, কেমন মায়া মায়া। আর এ মুহূর্তে জরি সে মায়াতে বিলিয়ে দিচ্ছে ওর সব অনুভূতি।
মেঘ ডেকেই চলেছে, বৃষ্টি থামার ইঙ্গিত বোধ হয়। আর এই শেষ পশলা বৃষ্টিতে ছাতা মাথায় অনুভূতির নীরব ছোড়াছুড়ি করছে একজোড়া সদ্য কিশোর-কিশোরী।
সেদিনের পর কেটে গেল কয়েকটা দিন। আস্তে আস্তে কয়েক সপ্তাহ। নাহ্, একটা দিনও ছেলেটা দাঁড়ায়নি ওখানে।
কেন আসে না, কি হয়েছে ওর, খুব জ্বর নাকি। আর কখনো দাঁড়াবে না এখানে?
ভাবতে ভাবতে কেঁদে ফেলে জরি। মেয়েটা আবার নিজেই অবাক হয় কান্নাফোটা দেখে। যার সাথে আজ পর্যন্ত একটা কথাও হয়নি তার জন্য কান্না এলো কেন? সব এলোমেলো হয়ে যায় ওর, সব ওলটপালট করে দিয়েছে ঐ পাজি ছেলেটা।
একদিন বিকেল। মন খারাপ নিয়ে ছাদের এক পাশে বসে আছে জরি। বিকেলের কমলাটে সূর্যের সমস্ত আলো এখন ওর মুখে। চোখ দুটো চিকচিক করছে সে আলোয়।
জরি - - - - -।
আনমনাভাবে পাশে তাকাতেই ধপ করে জ্বলে উঠল ওর দৃষ্টি। তারপরের দৃশ্যটা কেবলই আবেগের, একটু অতিমাত্রার আবেগই বলতে হবে।
- কেন তুমি, কেন এতদিন দাঁড়াওনি ঐখানে? বল, চুপ করে থাকবা না একটুও। তুমি জানো আমার কত কষ্ট হইছে, জানো? কেন আসো নাই, কেন একবারও দেখতে ইচ্ছা হলো না আমাকে?
- জরি - - - - আমি তোমায় খুব ভালবাসি, খুব। এতদিন নিজেকে আটকানোর চেষ্টা করছি শুধু, কিন্তু - - - -
আর শেষ করতে পারে না কথা, জরির অস্থির আদরে নির্বাক মুগ্ধ হয়ে যায় ছেলেটার কন্ঠ।
একজোড়া হঠাৎ ভালোবাসার শুরু এভাবেই।
এভাবেই চলল, চলছে ধীরে ধীরে। চলার পথটা এবার বোধহয় বন্ধের সিদ্ধান্তই নিলেন বিধাতা। বড় নির্মম সিদ্ধান্ত !
পাড়ার পরিচিতদের কানকথায় যখন জরির বাবা অস্থির, তখন হঠাৎ একদিন সন্ধ্যায় এলোপাথাড়ি মারতে শুরু করলেন মেয়েকে। তিনি যেন ভুলেই গেছেন এটা তার আপন মেয়ে, কোন প্রাণী নয়। মাও সাহস পেলেন না টু শব্দ করার। আসলে তার কানেওতো কিছু এসেছে। এতটুকু মেয়ের এতবড় সাহসে তিনিও যেন দিশেহারা। সমস্ত পাড়া ছড়িয়ে গেছে ওদের মেলামেশার খবর। পথেঘাটে জোড়ায় জোড়ায় নানা গুজব এখন প্রতিদিন। ঐ ছেলের নামে থানায় কেস করলেন বড়সড় করে। জরির বাবা একদম ক্ষেপে গেছেন। তারমধ্যে আবার অফিসের কেরানী কানে ঢুকিয়ে দিয়েছে বিয়ের ফন্দি। ব্যস, তিনিও নিলেন সিদ্ধান্ত। যত দ্রুত সম্ভব মেয়ে বিদেয় করতে তিনি সদা তৎপরতা শুরু করে দিলেন।
ভালোবাসার তীব্র আলোর তেজটা ক্রমেই নিস্তেজ হয়ে যাচ্ছে, হঠাৎ দপ করে নিভে যাবে হয়তো যে কোন সময়।
একদিন রাতে।
জরির চোখে প্রচন্ড ঘুম। তবু ঘুমাতে পারে না। চোখ বন্ধ করলেই ওর ছবি ভেসে ওঠে, এমনভাবে ঘুমানো যায়? কষ্ট লাগে না বুঝি। কতদিন মুখটায় আদর করা হয় না, কতটা দিন!
টেবিলে রাখা ফোনটা বেজে উঠতেই বিদ্যুতের গতিতে রিসিভ করে কতক্ষণ হাঁপায় জরি, তারপর আস্তে বলে ওঠে, হ্যালো বাবু?
- তোমাকে খুব মারছে জরি?
- হ্যাঁ বাবু, খুব মারছে। তুমি যেইখানে চুমু দাও, সেখানটায় কেটে গেছে। আর বাবু - - - -
- হ্যাঁ বল।
- জানো, আমাকে না বিয়ে দিয়ে দিবে। আমি তোমাকে ছাড়া থাকব কেমনে বাবু। বল না থাকব কেমনে - - - - -
ফোনের ওপাশে ছেলেটা কাঁদতে থাকে, অঝোর ধারার অশ্র“তে ভিজে চলে ফোনের পাশটা। জরি হয়তো কান্নার ফোটা বুঝতে পারে না, শুধু বোঝে ছেলেটা ওকে অনেক ভালোবাসে, প্রচন্ড। তারপর কেটে যায় প্রায় এক মাস।
মাঝের সময়টুকুতে ঘটে যায় অনেককিছু। এক জোড়া স্বচ্ছ ভালোবাসার প্রদীপ নিভে একদম শান্ত হয়ে যায় সব।
শান্ত হয় পাড়া, জরির বাবা, আর গুজব গাওয়া নিষ্ঠুর সে মানুষগুলো।
* পরিশেষ ঃ
হাজীপাড়ার নূর হোটেলের পাশের রাস্তাটা এখন খালিই পড়ে থাকে। মাঝারি আমগাছটার নিচে এখন আর কোন সদ্য কিশোর দাঁড়িয়ে থাকে না একটিবার তার প্রিয়’র মুখ দেখার জন্যে।
কত বর্ষা ভিজিয়ে চলে পথটা, ধুয়ে দেয় গাছকে। অথচ কোন কোন কিশোর-কিশোরীর নীরব ভালোবাসা আর বর্ণিল করে না বর্ষাকে। আর কখনো করবে না। হ্যাঁ, এটাই এখন নির্মম বাস্তবতা
------------------------------
লিখেছেন - আশিক পিয়াল
ছেলেটা হাউমাউ করে কাঁদছে। অথচ কোন শব্দ আসছে না, দু’হাতে যে মুখ চেপে ধরা। শব্দ আসবে কিভাবে? সমস্ত শরীরে ছোপ ছোপ রক্ত। কিছু রক্ত ভেসে যাচ্ছে উষ্ণ কান্নাজলে। ১৬ বছরের চঞ্চল ছেলেটা কান্না থামিয়ে দিচ্ছে আস্তে আস্তে। সেই সাথে বাড়ছে মেঝেতে রক্তের প্রবাহধারা। সামনের মৃদু আলো নিভে যাচ্ছে একটু একটু করে, অনেক। তারপর - - - - তারপর কেবল শরীরজুড়ে শীতল নিথরতা। বাহিরে হঠাৎ মেঘ ডেকে উঠল অপরিচিত গর্জনে।
শেষ দৃশ্য ঃ
এলোমেলো বাতাসে হঠাৎ হঠাৎ চুলগুলো ভেজামুখে লেপ্টে যাচ্ছে। তবু বিরক্তি নেই মেয়েটার। ও কি কিছুই টের পাচ্ছে না? সাদা কামিজের বুকের কাছটা লালচে হয়ে আছে। রক্তের লাল। কার রক্ত? জীবনের শ্রেষ্ঠ মানুষটার নিশ্চুপ নির্বাক মুখের লাল রক্ত, যে রক্তেই রঞ্জিত ওর বুক, ওর আত্মা, ওর জীবন। বাবা ধাক্কাধাক্কি করে না টানলে হয়তো অনন্তকাল ঐ মাথাটা জড়িয়ে রাখত বুকের সাথে।
টপটপ কান্নাফোটাগুলো ভিজিয়ে ফেলছে ওর হাত। যে হাতে প্রতি বিকেলে আর কোন আদরের ছাপ পড়বে না, কখনো না।
হারিয়ে যাওয়া দৃশ্য ঃ
দুপুর থেকে মেঘ ডেকেই যাচ্ছে। ভাবসাব সুবিধার না, হঠাৎ ঝড় শুরু হয়ে যেতে পারে। এখন বাজবে কয়টা, বিকাল হয়তো। আর আকাশের অবস্থাতো পুরাই সন্ধ্যা। জোরে জোরে হাঁটছে আর আকাশের দিকে তাকাচ্ছে জরি। গতকাল জ্বর থেকে উঠেছে, আজ যদি আবার ভেজে তবে মা আর আস্ত রাখবে না। বাবা কি করবে সেটা না হয় বাদই থাক।
এদিক সেদিক চোখ ঘুরানোর মাঝে হঠাৎ দৃষ্টি আটকে রাখল সামনে। জরির ঠোঁটে এখন লাজুক হাসি।
আচ্ছা ঐ পাগলটার কি কোন কাজ নেই? এত দেখে তবুও দেখা শেষ হয় না ওটার?
প্রশ্নটা করতে বড় ইচ্ছে করে, তবু থেমে থাকে। থাক, পরে যদি আবার হাওয়া হয়ে যায়। ছেলেটা বড্ড পাজি, বলা নেই, কওয়া নেই হঠাৎ করে কোথায় যেন ঘাপটি মেরে থাকে অনেকদিন।
জরি আস্তে আস্তে হেঁটে যায়, প্রচন্ড ইচ্ছে হয় ওকে একবার দেখতে। তবু মাথা নিচু করে থাকে, লজ্জা লাগে যে। কিছুদূর এগুতেই ঝমঝম করে নামল বৃষ্টি। অঝোর বৃষ্টিতে ভিজে যাচ্ছে জরি। ও একটু পিছন ফিরে তাকাতেই দেখে পাজিটা দৌড়ে আসছে। জরি জানে, ছেলেটা ওর হাতে ছাতাটা ধরিয়েই দিবে দৌড়। তারপর খুব জ্বরে বিছানা ছেড়ে উঠতে পারবে না। আসবে না এই জায়গাটায়, আর দেখাও হবে না। কিন্তু জরির যে অস্থির লাগে একটিবার ওর মুখটা না দেখলে।
জরির চোয়াল শক্ত হয়ে যায়, না আজ আর ওকে যেতে দেবে না। আজ হবে পাশাপাশি, একদম গভীর নীরব ভালোবাসার অনুরণ। ছেলেটা ওর হাতে ছাতাটা ধরাবার আগেই জরি নরম হাতে ধরে ফেলল ওর হাত। ছেলেটার দৃষ্টি বড় শান্ত, কেমন মায়া মায়া। আর এ মুহূর্তে জরি সে মায়াতে বিলিয়ে দিচ্ছে ওর সব অনুভূতি।
মেঘ ডেকেই চলেছে, বৃষ্টি থামার ইঙ্গিত বোধ হয়। আর এই শেষ পশলা বৃষ্টিতে ছাতা মাথায় অনুভূতির নীরব ছোড়াছুড়ি করছে একজোড়া সদ্য কিশোর-কিশোরী।
সেদিনের পর কেটে গেল কয়েকটা দিন। আস্তে আস্তে কয়েক সপ্তাহ। নাহ্, একটা দিনও ছেলেটা দাঁড়ায়নি ওখানে।
কেন আসে না, কি হয়েছে ওর, খুব জ্বর নাকি। আর কখনো দাঁড়াবে না এখানে?
ভাবতে ভাবতে কেঁদে ফেলে জরি। মেয়েটা আবার নিজেই অবাক হয় কান্নাফোটা দেখে। যার সাথে আজ পর্যন্ত একটা কথাও হয়নি তার জন্য কান্না এলো কেন? সব এলোমেলো হয়ে যায় ওর, সব ওলটপালট করে দিয়েছে ঐ পাজি ছেলেটা।
একদিন বিকেল। মন খারাপ নিয়ে ছাদের এক পাশে বসে আছে জরি। বিকেলের কমলাটে সূর্যের সমস্ত আলো এখন ওর মুখে। চোখ দুটো চিকচিক করছে সে আলোয়।
জরি - - - - -।
আনমনাভাবে পাশে তাকাতেই ধপ করে জ্বলে উঠল ওর দৃষ্টি। তারপরের দৃশ্যটা কেবলই আবেগের, একটু অতিমাত্রার আবেগই বলতে হবে।
- কেন তুমি, কেন এতদিন দাঁড়াওনি ঐখানে? বল, চুপ করে থাকবা না একটুও। তুমি জানো আমার কত কষ্ট হইছে, জানো? কেন আসো নাই, কেন একবারও দেখতে ইচ্ছা হলো না আমাকে?
- জরি - - - - আমি তোমায় খুব ভালবাসি, খুব। এতদিন নিজেকে আটকানোর চেষ্টা করছি শুধু, কিন্তু - - - -
আর শেষ করতে পারে না কথা, জরির অস্থির আদরে নির্বাক মুগ্ধ হয়ে যায় ছেলেটার কন্ঠ।
একজোড়া হঠাৎ ভালোবাসার শুরু এভাবেই।
এভাবেই চলল, চলছে ধীরে ধীরে। চলার পথটা এবার বোধহয় বন্ধের সিদ্ধান্তই নিলেন বিধাতা। বড় নির্মম সিদ্ধান্ত !
পাড়ার পরিচিতদের কানকথায় যখন জরির বাবা অস্থির, তখন হঠাৎ একদিন সন্ধ্যায় এলোপাথাড়ি মারতে শুরু করলেন মেয়েকে। তিনি যেন ভুলেই গেছেন এটা তার আপন মেয়ে, কোন প্রাণী নয়। মাও সাহস পেলেন না টু শব্দ করার। আসলে তার কানেওতো কিছু এসেছে। এতটুকু মেয়ের এতবড় সাহসে তিনিও যেন দিশেহারা। সমস্ত পাড়া ছড়িয়ে গেছে ওদের মেলামেশার খবর। পথেঘাটে জোড়ায় জোড়ায় নানা গুজব এখন প্রতিদিন। ঐ ছেলের নামে থানায় কেস করলেন বড়সড় করে। জরির বাবা একদম ক্ষেপে গেছেন। তারমধ্যে আবার অফিসের কেরানী কানে ঢুকিয়ে দিয়েছে বিয়ের ফন্দি। ব্যস, তিনিও নিলেন সিদ্ধান্ত। যত দ্রুত সম্ভব মেয়ে বিদেয় করতে তিনি সদা তৎপরতা শুরু করে দিলেন।
ভালোবাসার তীব্র আলোর তেজটা ক্রমেই নিস্তেজ হয়ে যাচ্ছে, হঠাৎ দপ করে নিভে যাবে হয়তো যে কোন সময়।
একদিন রাতে।
জরির চোখে প্রচন্ড ঘুম। তবু ঘুমাতে পারে না। চোখ বন্ধ করলেই ওর ছবি ভেসে ওঠে, এমনভাবে ঘুমানো যায়? কষ্ট লাগে না বুঝি। কতদিন মুখটায় আদর করা হয় না, কতটা দিন!
টেবিলে রাখা ফোনটা বেজে উঠতেই বিদ্যুতের গতিতে রিসিভ করে কতক্ষণ হাঁপায় জরি, তারপর আস্তে বলে ওঠে, হ্যালো বাবু?
- তোমাকে খুব মারছে জরি?
- হ্যাঁ বাবু, খুব মারছে। তুমি যেইখানে চুমু দাও, সেখানটায় কেটে গেছে। আর বাবু - - - -
- হ্যাঁ বল।
- জানো, আমাকে না বিয়ে দিয়ে দিবে। আমি তোমাকে ছাড়া থাকব কেমনে বাবু। বল না থাকব কেমনে - - - - -
ফোনের ওপাশে ছেলেটা কাঁদতে থাকে, অঝোর ধারার অশ্র“তে ভিজে চলে ফোনের পাশটা। জরি হয়তো কান্নার ফোটা বুঝতে পারে না, শুধু বোঝে ছেলেটা ওকে অনেক ভালোবাসে, প্রচন্ড। তারপর কেটে যায় প্রায় এক মাস।
মাঝের সময়টুকুতে ঘটে যায় অনেককিছু। এক জোড়া স্বচ্ছ ভালোবাসার প্রদীপ নিভে একদম শান্ত হয়ে যায় সব।
শান্ত হয় পাড়া, জরির বাবা, আর গুজব গাওয়া নিষ্ঠুর সে মানুষগুলো।
* পরিশেষ ঃ
হাজীপাড়ার নূর হোটেলের পাশের রাস্তাটা এখন খালিই পড়ে থাকে। মাঝারি আমগাছটার নিচে এখন আর কোন সদ্য কিশোর দাঁড়িয়ে থাকে না একটিবার তার প্রিয়’র মুখ দেখার জন্যে।
কত বর্ষা ভিজিয়ে চলে পথটা, ধুয়ে দেয় গাছকে। অথচ কোন কোন কিশোর-কিশোরীর নীরব ভালোবাসা আর বর্ণিল করে না বর্ষাকে। আর কখনো করবে না। হ্যাঁ, এটাই এখন নির্মম বাস্তবতা
------------------------------
লিখেছেন - আশিক পিয়াল
No comments:
Post a Comment